সম্পাদকীয়
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন
দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের সম্ভবত এক যুগসন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা চলেছি। অতিমারীর বর্তমান প্রকোপের যখন অবসান হবে, তখন এই উপমহাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের আর্থিক অগ্রগতির পথের মধ্যে যে ভিন্নতা ও ব্যবধান ইতিমধ্যেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে, তার প্রকৃত স্বরূপ হয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশিত হবে। সমকালীন ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনীতির অতি-সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলির ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি অন্বেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই তথ্যই হদিস দেবে এই বিপুল ভূভাগের আসন্ন রাজনৈতিক আর সামাজিক পরিবর্তনের প্রকৃতির। ‘ইতিহাস আড্ডা’র মুখবই ও পোর্টালের পাতায় দক্ষিণ এশিয়ার, বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের, সাম্প্রতিকতম আর্থিক পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে পাঠকদের সামনে নিয়মিতভাবে উপস্থিত করার জন্য আমরা প্রতিবদ্ধ থাকব।
ঔপনিবেশিক শাসনমুক্তির পর বিগত কয়েক দশকে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে রাজনৈতিক আর সামাজিক পরিবর্তন যে বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে, অথবা শীতল যুদ্ধের অবসানের পর ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকার দেশগুলিতে যে সব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, কিংবা লাতিন অ্যামেরিকায় বিগত কয়েক দশকে যেসব নতুন রাজনৈতিক ভাবনা জন্ম নিয়েছে, ইতিহাসের সেই নতুন দিকচিহ্নগুলির উপস্থিতি আমাদের ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ গোষ্ঠীর লেখায় এখনও পর্যন্ত বিশেষভাবে পরিলক্ষিত না হলেও, অদূর ভবিষ্যতে তাদের আগমন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতের আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আমরা যে সমকালীন বিশ্বের পরিবর্তনের চেহারাটাকে চিনতে চাই, বুঝতে চাই, জানাতে চাই- অনতিবিলম্বে সেই ভাবনা প্রতিফলিত হবে আমাদের ‘ইতিহাস আড্ডা’র সামাজিক মাধ্যমের বৈদ্যুতিন পৃষ্ঠায়।
আমরা নিশ্চিত, যে সংকল্প নিয়ে ‘ইতিহাস আড্ডা’র জন্ম, সেই মুক্তমনা, যুক্তিনির্ভর, তথ্যভিত্তিক ইতিহাসের ধারার স্রোত আজকের এই ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ’কেও অতিক্রম করেও বহমান থাকবে, আর সচেতনতাই হবে আমাদের পথ চলার মূলমন্ত্র। আমরা ‘ইতিহাস আড্ডা’র সামাজিক মাধ্যমের মঞ্চে সেই দায়িত্বকে এমনভাবে পালন করতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলে বলতে না পারে- “তুমি তো কখনো বিপদপ্রাজ্ঞ নও”।
আমরা অসংশয়িত,আগামী দিনেও আজকের মতই ‘ইতিহাস আড্ডা’র মহামিছিলে লেখক আর পাঠক একসাথে চলবে, পাশাপাশি, হাতে হাত রেখে; আমাদের এই প্রিয় পৃথিবীকে আরও বেশি করে জানার জন্য, আমাদের নিজেদেরই বাঁচবার তাগিদে।