সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাম্প্রতিক লেখা

ইউরোপ, এমনকি মহাসাগরের ওপারে ইউরোপীয় সভ্যতারই সম্প্রসারিত রূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কল্পনা ও মননে রোমের পতনের দীর্ঘ ছায়া আজও বিদ্যমান। আজও ‘পশ্চিম’-এর পতন সংক্রান্ত যে কোনও বিতর্কে হামেশাই রোমের পতনের সঙ্গে তুলনা টেনে আনা হয়। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন রোমান সাম্রাজ্যের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনও একদিন পতন হবে কিনা, ইউরোপের অতি-দক্ষিণপন্থীরা বর্বর আক্রমণের সঙ্গে তুলনা টানেন অভিবাসনের। মোট কথা, ‘পতন’ বলতেই ইউরোপীয়দের (এবং আমেরিকানদের) মননে প্রথম যে চিত্রটি ভেসে ওঠে, তা প্রাচীন রোম-সংক্রান্ত। এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া ভালো, রোমের পতন বলতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষের দশকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কথা আমরা বলছি। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য, যা ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ অবধি বজায় ছিল, তার সম্পর্কে ইউরোপের ঐতিহাসিক স্মৃতি ও ধারণা অন্যপ্রকার, সে এই আলোচনার বিষয় নয়। এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য, আধুনিক ইউরোপের বদলাতে থাকা ঘটনাবলী রোমের পতন সংক্রান্ত ঐতিহাসিক আলোচনাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করা।
রাশিয়ায় ষোড়শ, এমনকি সপ্তদশ শতকেও বই বলতে হাতে লেখা বইয়ের কথাই ভাবা হতো। ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ার গুটিকয়েক মানুষ অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে হাতে লেখা বই থেকে ছাপানো বই গ্রহণ করেছিলেন। দিনটা ১৫৬৪ সালের ১৯ এপ্রিল, মস্কো প্রেস হাউজ থেকে প্রথম বই প্রকাশ পায়, তাই এই দিনটিকেই রাশিয়ার মুদ্রণ যুগের সূচনার দিন বলে ধরে নেওয়া হয় (আর কিছুদিন পরেই রাশিয়ায় ছাপার ৪৬০ বছর পালন করা হবে)। প্রথম ছাপা এই বইটি ছিল ধর্ম বিষয়ক। এটি ছাপিয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত দুই বন্ধু, ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌, এদেরকে রাশিয়ার মুদ্রণ জগতের প্রতীক বলে মনে করা হয় এবং তাঁদের তুলনা করা যেতে পারে একমাত্র ফ্রান্সিস্ স্কারিনা’র সঙ্গে; যাকে পূর্ব ইউরোপের ছাপাখানার জনক বলা হয়। বলতে গেলে সেই সময় হাতে লেখা বইয়ের ব্যবসা এতটাই জমজমাট ও জনপ্রিয় ছিল যে, ছাপা বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়াটা খুব কঠিন ছিল।
২ রা জুলাই, ১৮৪৩ সাল। সকাল বেলা রিচমন্ডের 'মর্নিং হেরাল্ড'-এর একটা প্রতিবেদন দেখে ভ্রু কুঁচকে উঠল ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন গ্রোভার-এর। প্রতিবেদনটা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটা চিঠি, লিখেছেন রেভারেন্ড যোসেফ ওল্ফ। দুই ব্রিটিশ সামরিক অফিসার, ক্যাপ্টেন আর্থার কনোলি এবং চার্লস স্টড্ডারট, বিগত ৫ বছর ধরে নিরুদ্দেশ। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যোসেফ ওল্ফ। এই দুই অফিসার মধ্য এশিয়ার বুখারা থেকে নিখোঁজ। যেহেতু যোসেফ ওল্ফ নিজে কিছুদিন বুখারায় তাঁর মিশনের কাজে ছিলেন এবং এই অঞ্চলে থাকার অভিজ্ঞতা আছে, তাই তাকে যদি সামান্য অর্থ সাহায্য করা হয় বা কেউ যদি তাঁর সঙ্গে এই নতুন অভিযানে যেতে ইচ্ছুক হন তাহলে তিনি বিশেষ উপকৃত হবেন। তিনি বিশেষ ভাবে চিন্তিত কারণ তাঁর কাছে খবর আছে যে, এই দুই ব্রিটিশ অফিসারকে বুখারার কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখে অবশেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কনোলি এবং স্টড্ডারট দুজনেই ভক্ত খ্রীষ্টান, তাদের খোঁজ নেওয়া যোসেফের দায়িত্ব।
১৯৩৫ সালের ২রা আগস্ট কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেস অধিবেশনে পেশ করা ‘যুক্তফ্রন্ট থিসিস’-এ প্রখ্যাত বুলগেরিয়ান কমিউনিস্ট নেতা জর্জি ডিমিট্রভ ‘দি ক্লাস ক্যারেক্টার অফ ফ্যাসিজম’ প্রবন্ধে জার্মান নাৎসিবাদকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “The most reactionary variety of fascism is the German type of fascism. It has the effrontery to call itself National Socialism, though it has nothing in common with socialism. German fascism is not only bourgeois nationalism, it is fiendish chauvinism. It is a government system of political gangsterism, a system of provocation and torture practised upon the working class and the revolutionary elements of the peasantry, the petty bourgeoisie and the intelligentsia. It is medieval barbarity and bestiality, it is unbridled aggression in relation to other nations.” (“সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ধরনের ফ্যাসিবাদ হল জার্মান ফ্যাসিবাদ। এর নিজেকে জাতীয় সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করার ধৃষ্টতা রয়েছে, যদিও সমাজতন্ত্রের সঙ্গে এর কোনওই মিল নেই। হিটলারের ফ্যাসিবাদ শুধুমাত্র বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ নয়, এ হল পাশবিক জাতিদম্ভ। এ হল রাজনৈতিক দস্যুতার এক শাসনব্যবস্থা, শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক, পেটি-বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লবী অংশের বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও নির্যাতনের ব্যবস্থা। এ হল মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও পাশবিকতা, অন্যান্য জাতিদের সম্পর্কে বল্গাহীন আক্রমণ।”)
অফিসবাড়িটা সমুদ্রের ধারে। সেই বাড়ির মাথায় লাগানো হাওয়া মোরগের দিকে গত কয়েকদিন ধরেই কড়া নজর সবার। পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ ঘুরে , প্রায় ষোলো হাজার মাইল পেরিয়ে ,সুদূর প্রাচ্যের চীন দেশের ফুচাও বা ক্যান্টন বন্দর থেকে দুষ্প্রাপ্য সুগন্ধি চা-বাহী জাহাজগুলো কবে নাগাদ বন্দরে ঢুকবে তার ইঙ্গিত দেবে ওই হাওয়া মোরগ। সে নট নড়ন চড়ন হয়ে গম্ভীর হয়ে থাকলেই লন্ডন শহরের জাহাজ মালিক থেকে চায়ের দোকানী, জাহাজীবাবু থেকে চায়ের দালাল; সবার মুখ গম্ভীর, ভুরুতে ভাঁজ… হাওয়া তার মানে পড়তি। কিন্তু মোরগের মুখ যদি তিরতির করে ঘুরে যায় দক্ষিণ পশ্চিমে? তাহলে হাহাকার! সমুদ্দুর পেরিয়ে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে চা নিয়ে জাহাজগুলোর পৌঁছনো তার মানে পিছিয়ে গেল আবার! কি যে হবে! দুষ্প্রাপ্য এই পাতাগুলোর স্বাদ-গন্ধ-গুণ-মান ঠিক থাকবে তো?